আকিকার নিয়ম ও দোয়া

আকিকার নিয়ম ও দোয়া জেনে না থাকলে আজকের এই পোস্টটি হতে চলেছে আপনার জন্য। ইসলামে আকিকার নিয়ম ও দোয়া নির্দিষ্ট রয়েছে। সুতরাং আকিকার নিয়ম ও দোয়া মোতাবেক আকিকা দিলে তা মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। তাই আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে এই পোস্টটি পুরোটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন আকিকা কেবল শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। ইসলামে শিশুর জন্মের পর তার প্রথম স্বাগত অনুষ্ঠান 'আকিকাহ' নামে অভিহিত। এটি সন্তানের জন্মের পর অনুষ্ঠিত হয়। আজ এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনারা গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম, ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম, মেয়ে সন্তানের আকিকার দোয়া, মেয়ে সন্তানের আকিকার নিয়ম, আকিকার নিয়ম ও দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হবেন।

পোস্ট সূচিপত্র - আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আকিকা কী

ইসলাম ধর্মে আকিকা হলো নবাগত সন্তানের নামকরণের জন্য ছোট পরিসরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে মূলত তার চুল কেটে পশু কুরবানী দেওয়া হয়। কোরবানির জন্য নির্ধারিত সকল পশুই আকিকা হিসাবে দেওয়া যায়। ইসলামে দুই শব্দের নাম রাখার ব্যাপারে ইরশাদ করা হয়েছে। তাই আকিকা অনুষ্ঠানে নতুন সন্তানের নাম অবশ্যই দুই শব্দে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আমরা এই পোস্টের পরবর্তী অংশ থেকে আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে জানবো।

আকিকার নিয়ম ও দোয়া

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং সন্তানের কল্যাণ কামনায় আকিকা করা হয়। সহীহ্ শুদ্ধভাবে আকিকা আদায় করার জন্য আকিকার নিয়ম ও দোয়া নির্দিষ্ট রয়েছে। তাই আমাদের সকলের অবশ্যই আকিকার দোয়া ও নিয়ম-কানুন জেনে নিতে হবে। অতঃপর নিয়ম কানুন মোতাবেক আকিকা আদায় করলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। হাদিসে আছে সন্তান জন্মদিনের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে হালাল পশু জবাই করতে হবে, মাথা মুন্ডন করে তার নাম রাখতে হবে। (তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার নিজের আকিকা নিজেই করেছেন এবং অন্যদের আকিকা দিতে করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আকিকা আদায়ের শরীয়ত সম্মত নিয়ম অনুযায়ী সন্তান জন্মদানের সপ্তম দিনে তার কল্যাণ কামনায় সন্তানের একটি সুন্দর ইসলামিক নাম রাখতে হবে যেন শুনলেই মনে হয় সে একজন মুসলিম, তারপর সন্তানের মাথা কামিয়ে চুলের সমপরিমাণ ওজন করে সোনা বা রূপা দান করতে হবে এবং হালাল পশু কুরবানী করতে হবে। এগুলো আদায় করা সন্তানের অভিভাবকের দায়িত্ব।
আকিকার দোয়া হিসাবে, এই দোয়াটি পড়তে হবে। "আল্লাহুম্মা হাযিহী আকিকাতু ইবনী ফুলানিন দামুহাবিদামিহী ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহী ওয়া আজমুহা বিআযমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহী ওয়া শা"রুহা বিশার"রিহী আল্লাহুম্মাজআলহা ফিদাআল্লি ইবনী মিনান্নার।" এরপর পড়তে হবে, "ইন্নিওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি অল আরদা মিল্লাতা ইবরাহিমা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সলাতি ওয়া নুসুকি অমাহ ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লাশারিকালাহু ওয়াবিজালিকা ওমিরতু আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিছমিল্লাহি আল্লাহুআকবার বলে আকিকার পশু জবেহ করবে।" 

ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম মেয়েদের চেয়ে আলাদা। ছেলেদের ক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী একই বয়সের দুইটি খাসি বা ছাগল কিংবা মেষ-ভেড়া ইত্যাদি আকিকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলে সন্তানের জন্য তাদেরকে দুটি সমবয়সী ছাগল দিয়ে আকিকা করা নির্দেশ দিয়েছেন।" আর ছেলে সন্তান জন্মের সপ্তম দিনেই আকিকা দেওয়া অধিক উত্তম। আপনারা ইতোমধ্যে আকিকার নিয়ম ও দোয়া জেনেছেন।

মেয়েদের আকিকার নিয়ম এবং মেয়ে সন্তানের আকিকার দোয়া

প্রিয় পাঠক পোস্টের পূর্ববতী অংশে আপনারা আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। এবার চলুন মেয়েদের আকিকার নিয়ম ও মেয়ে সন্তানের আকিকার দোয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া নিই। মেয়েদের আকিকার ক্ষেত্রে একটি খাসি জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, "আর যাদের মেয়ে সন্তান হবে তাদের একটি ছাগল দিয়ে রাসূল (সাঃ) আকিকা দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। (আবু দাউদ)
সন্তান যদি মেয়ে হয় তবে তার আকিকার সময় একটি নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করতে হয়। সেই দোয়াটি হলো, "বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা (মেয়ের নাম) বিনতে (পিতার নাম)। আশা করি আপনারা মেয়ে সন্তানের আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ আরও এরশাদ করেন, সপ্তম দিনে যদি আকিকা দেওয়া না যায় তবে ১৪ তম অথবা ২১ তম দিনেও আকিকা দেওয়া যাবে। মহান আল্লাহ আমাদের আকিকা কবুল করুন। আমিন।

গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম

কোরবানির জন্য যে সকল পশুকে হালাল করা হয়েছে কেবল সে সকল পশু দ্বারাই আকিকা করা জায়েজ রয়েছে। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কোরবানিতে যে সকল গরু দিয়ে কুরবানী দেওয়া যায় তা দিয়ে আকিকাও দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে গরুর বয়স অবশ্যই তিন বছরের বেশি হতে হবে। এছাড়াও শারীরিক ত্রুটিসম্পন্ন যেমন পঙ্গু, অন্ধ, খোড়া এমন কোন গরু আকিকা দেওয়া যাবে না। সবশেষে আকিকার দোয়া পড়ে, আল্লাহু আকবার বলে জবেহ দিতে হবে। আশা করি গরু দিয়ে আকিকার নিয়ম ও দোয়া বুঝতে পেরেছেন।

শেষ কথাঃ ইসলামের দৃষ্টিতে আকিকার নিয়ম ও দোয়া

প্রিয় দ্বীনি বন্ধুরা! আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে আপনারা ইসলামের দৃষ্টিতে আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অবগত হয়েছেন। অতএব, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে যত দ্রুত সম্ভব আকিকা আদায় করে ফেলতে হবে। আর আকিকার মাংস বন্টনের ক্ষেত্রে কোরবানির মাংস বন্টনের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম খুব সহজ করে দিয়েছেন। এটি মোটেও পরিবারের জন্য কোনো বোঝা নয় বরং সঠিক সময়ে আকিকা দিলে সন্তানের কল্যাণের পাশাপাশি সর্বশক্তিমান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করা সম্ভব হবে। পরিশেষে আকিকার নিয়ম ও দোয়া সকলকে জানাতে পোস্টটি এখনই শেয়ার করে ফেলুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url