কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস জেনে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কোরবানি করা একজন মুসলমানের দায়িত্ব। তার জন্য আমাদেরকে কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে। আমাদের নবীজি যে সকল কথা এবং কাজ করে গিয়েছেন সাধারণত সেগুলোকেই হাদীস বলা হয়। কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।

আপনি যদি কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

কোরবানি সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি কিন্তু এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে তেমনভাবে জানা নেই। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত অর্থাৎ কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কারণ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোরবানি করা।

আরো পড়ুনঃ কোরবানি ঈদের চাঁদ দেখার দোয়া - চাঁদ দেখার দোয়া বাংলা

সাহাবাগণ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসুল! কোরবানি কি? তিনি সাবলীল ভাবে এই প্রশ্নের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত তুলে ধরেছেন। কোরবানি শব্দের অর্থ হলো নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কোরবান হলো সেই বস্তু যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। আর সেখান থেকে ফার্সি বা উর্দু বাংলাতে কোরবানি শব্দটি গৃহীত হয়েছে।

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে জেলহাত মাসের ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত কোরবানির নিয়তে উট, গরু মহিষ অথবা ছাগল জবাই করার নাম হলো কোরবানি। আর এ পশুর পশমযত বেশি হোক না কেন প্রতিটি পশমের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে সওয়াব। এখান থেকে বোঝা যায় যে কোরবানির গুরুত্ব কত বেশি।

হযরত জায়েদ ইবনে আরকাম রাঃ বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কেরাম একদিন নবীজি সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাঃ এর কুরবানী কি? আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বললেন, "এটা তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নাত। তাকে আবারো জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সাঃ এতে আমাদের কি ফজিলত?"

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জবাবে বললেন, "প্রতিটি লোম এর পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে।" তারা আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, "পশম বিশিষ্ট পশুর বেলায় কি হবে?" নবীজি সাঃ বললেন, " পশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে ও একটি করে নেকি রয়েছে।" সুবহানআল্লাহ!{মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ} একটি গুরুত্বপূর্ণ কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস।

আল্লাহ তা'আলা বলেন, "অতঃপর তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।"{সূরা কাওসারঃ ২} আল্লাহতালা এই আয়াতে নামাজ এবং কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুইটি ইবাদতের সবচেয়ে বেশি করেছেন। তিনি যেমন বেশি নামাজ আদায় করেছেন তেমন বেশি কোরবানিও করেছেন।

কোরবানি করার প্রতিদান

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা কয়েকটি স্থানে কোরবানি করার কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা সরাসরি কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার মদিনার জীবনে প্রতি বছর কোরবানি করতেন। ইবনে ওমর রা থেকে বর্ণিত, "রাসূল সাঃ মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছিলেন, প্রতি বছর তিনি কোরবানি করতেন।"{ইবনে মাজাহঃ ৩১২৭}

কোরবানি করা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নাত। কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি লিখা হয় আমলনামায়। কোরবানি আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় আমল। মা আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, কোরবানির ঈদের দিন মানুষের সব নেক আমলের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো কোরবানি করা। কিয়ামতের ময়দানে জবেহকৃত জন্তু তার সিং, লোম, হুরসহ এসে হাজির হবে।

নিশ্চয়ই কোরবানির রক্তজমিনা পড়ার আগে আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। অতঃপর তোমরা খুশি মনে আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। {ইবনে মাজাহঃ ৩১২৬} অবশ্যই সেই কুরবানীর পশু হতে হবে হালাল টাকার। হারাম টাকার কোরবানি আল্লাহতালার কাছে কখনোই কবুল হয় না। কোরবানি করলে অতীতের সগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

আবু সাঈদ খুদরি রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ ফাতেমা রাঃ কে বলেন, তুমি তোমার কোরবানির জন্তু জবেহর স্থানে উপস্থিত থাকো। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার অতীতের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন। ফাতিমা রাঃ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাঃ এই গুনাহ ক্ষমা হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য বিশেষত, নাকি সব মুসলমানদের জন্য?

নবীজি বললেন, আমাদেরও সব মুসলমানদের গুনাহ ক্ষমা করা হবে। {মুস্তাদরাক হাকিমঃ ৭৬৩৩} আমরা সকলে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি করার চেষ্টা করব। কোরবানি করলে এর প্রতিদান আমরা কিয়ামতের দিন নিশ্চয়ই পাবো যদি সেই কুরবানী হয় পরিশ্রম এবং হালাল টাকায়। সব সময় চেষ্টা করব আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য হালাল ঢাকায় কোরবানি দেওয়া।

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

কোরবানি যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত তাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বর্ণিত অনেকগুলো হাদিস পাওয়া যায়। অনেকেই আছে যারা কোরবানি আসলেই কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস গুলো সম্পর্কে জানতে চেয়ে গুগলের সার্চ করে। নিচে তাদের আগ্রহের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো।

শাদ্দাদ ইবনে আওছ রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, "আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ওপর অনুগ্রহ অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করো। প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে।" {সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ ২-১৫২}

আরো পড়ুনঃ কোরবানি ওয়াজিব না ফরজ - কোরবানি ওয়াজিব না সুন্নত

আনাস ইবনে মালিক রাঃ বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ দুইটি সাদা, কালো বর্ণের বড় শিং বিশিষ্ট নর দুম্বা কোরবানি করেছেন। আমি দেখেছি, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার বললেন। অতঃপর নিজ হাতে জবেহ করলেন। {বুখারিঃ ২-৮৩৪} আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন, "নবী করিম সাঃ ঈদগাহে জবেহ করতেন এবং নহর করতেন।" {বুখারিঃ ২-৮৩৩}

ইবনে আজিব রাঃ বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, "আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কাজ আমাদের তরিকা মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে অর্থাৎ তার কাজ তরিকা মতো হয়নি। অতএব তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত কোরবানি নয়।" {সহিহ বুখারিঃ ২-৮৩২}

অন্য হাদিসে এসেছে কোনো কোনো সাহাবি ভুলক্রমে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করেছিলেন। নবী করিম সাঃ তাদের পুনরায় কোরবানি করার আদেশ করেন। {সহিহ বুখারিঃ ৮২৭} হজরত ইবনে ওমর রাঃ বর্ণনা করেন, "রাসুলুল্লাহ সাঃ ১০ বছর মদিনায় অবস্থান করেছেন। মদিনায় অবস্থানকালীন প্রত্যেক বছরেই কোরবানি করেছেন।" {মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি}

রাসুলুল্লাহ সাঃ কোনো বছর কোরবানি থেকে বিতর থাকেননি। তিনি কর্মে দ্বারা যেমন কোরবানি করতে অনুপ্রাণিত করেছেন আবার বক্তব্য দিয়ে কোরবানির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে পশু জবেহ করে সে নিজের জন্য জবেহ করে। আর যে নামাজের পর জবেহ করে তার কোরবানি সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরিকার অনুসারী হয়।" {বুখারি}

জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনরাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর অবকাশ দিয়ে বলেন, "খাও পাথেয় হিসাবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ।" {সহিহ মুসলিমঃ ১৫৮} উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রাঃ এর এক বর্ণনায় আছে যে, "খাও, সংরক্ষণ কর এবং সদকা করো।" {সহিহ মুসলিমঃ ১৫৮}

কোরবানি করার নিয়ম

উপরের আলোচনায় কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোরবানি করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কারণ কোরবানি করার একটি সঠিক নিয়ম রয়েছে। যদি আমরা সঠিকভাবে এবং নিয়ম অনুযায়ী কোরবানি করতে চাই তাহলে অবশ্যই এই নিয়মটি মেনে কুরবানী করতে হবে।

কোরবানির পশু শোয়ানোর পর যেন কেবলামুখী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পশ্চিম দিকে যেহেতু আমাদের কিবলা সেই হিসেবে পশ্চিম দিকে যাতে পশুর মুখ হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। পশুকে বা পাঁজরের ওপর দক্ষিণ দিকে মাথা করে কেবলামুখী করে শোতে হবে। কুরবানী সঠিক নিয়মে করার জন্য এভাবে পশুকে শোয়ানো উত্তম। এরপরে পশুকে এমন ভাবে ধরতে হবে বা বেঁধে নিতে হবে যেন জবাই করার সময় বারবার পা ছুটতে না পারে।

উটের ক্ষেত্রে নহর করা যায়। নহর হলো দাঁড়ানো অবস্থায় বুকের দিকে থেকে ঘাড় পর্যন্ত চলে যাওয়া প্রধান রক্ত বাহির রগ কেটে দেওয়া। নহর করলে রক্তক্ষরণ হতে হতে মাটিতে ধরে পড়ে এবং একসময় মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া আপনি উটকে শোয়ানো অবস্থায় জবাই করতে পারেন। জবাই করার সময় যাতে পশু বেশি কষ্ট না পায় সেজন্য ছুরিতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে।

পশুর গলায় ছুরি চালানোর সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে ছুরি চালাতে হবে। এছাড়া আপনি যদি ভুল ক্রমে শুধু বিসমিল্লাহ বলে থাকেন তাহলেও হবে। যারা কোরবানির পশু জবাই করবেন অথবা ধরবেন তারা পবিত্র অবস্থায় থাকবেন। শালীনভাবে কাপড় পরিধান করতে হবে। পশুকে যদি শোয়াতে কষ্ট হয় তাহলে পশুকে কখনো কিল, ঘুষি, লাথি মারা যাবে না। যার টাকায় কোরবানি হবে সাধারণত সে ব্যক্তি কোরবানি করা সব থেকে উত্তম।

কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিসঃ শেষ কথা

কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত, কোরবানি করার প্রতিদান, কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস, কোরবানি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি প্রকৃত মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ আমাদের নবীজি সাঃ কিভাবে কোরবানি করেছেন? সেই অনুযায়ী আমাদের করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ কোন কোন পশু কোরবানি দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url