ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া

 ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আজকে আমরা আলোচনা করব ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে জেনে নিন।
ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে আপনাদের জন্য নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা আছে। যেগুলো পড়ার মাধ্যমে আপনারা খুব সহজে জানতে পারবেন ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন ঝটপট করে জেনে নেয়া যাক ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে।

পেজ সূচিপত্রঃ ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া

ভূমিকা

বিয়ে একটি পরিবার গঠনের প্রথম ধাপ। মূলত সৃষ্টিকর্তা নারী পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে তৈরি করেছেন। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব দূর হয়। আর এই বিয়ে সঠিকভাবে পড়ানোর জন্য ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে জানতে হবে। বিভিন্ন ধর্মের বিয়ে বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে, তেমনি ইসলামিক বিয়েরও কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে।

ইসলামী বিবাহের বর, কনে এবং কনের অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন হয়। বৈবাহিক চুক্তিটি অবশ্যই কনের অভিভাবক এবং ওদের দ্বারা সম্পাদিত হতে হবে, বর এবং কনের দ্বারা নয়। কনের নিকটস্থল পুরুষ অভিভাবক কনের ওয়ালি হবেন। প্রাথমিকভাবে কনের বাবাকে কনের প্রধান অভিভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিবাহ বলতে কি বুঝায়

বিবাহ বা বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিয়ে হল পরিবার গঠনের প্রথম ধাপ। বিয়েকে ইসলাম ধর্মে সুন্নত বলা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিবাহের মাধ্যমে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু হওয়াকে বিবাহ বলে। বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতি ভেদে বিবাহের সংজ্ঞার তারতম্য থাকলেও সাধারণত ভাবে বিবাহ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও যৌন সম্পর্ক সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে। বিবাহের মাধ্যমে একটি জাতি অগ্রসর হয়ে থাকে।

ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া আরবি

ইসলামে বিয়ে করার জন্য কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে, আর আমাদের এই সকল নিয়ম নীতি মেনে বিবাহ সম্পন্ন করতে হয়। তার ভেতর একটি প্রধান নিয়ম হলো ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া। ইসলাম ধর্মের বিয়ে করাকে সুন্নতি কাজ বলা হয়। আল্লাহতালা বিবাহকে সবার জন্য বৈধ ও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। এবং সুন্দর ও সঠিকভাবে বিয়ে সম্পূর্ণ করার জন্য সুরাও বর্ণিত করেছেন। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়াটি। দোয়াটি হল-

بارَكَ اللّهُ لَك، وَبارَكَ عَلَـيْك، وَجَمَعَ بَيْـنَكُما في خَـيْر

উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খাইরিন।

অর্থআল্লাহ আপনাকে আশীর্বাদ করুক, এবং আপনার ওপর তার বরকত বর্ষণ করুক, এবং আপনাকে কল্যাণের সাথে যুক্ত করুক। (আবু দাউদ) ।

বাসর রাতের দোয়া সমূহ

বিবাহ যেমন পরিবার গঠনে প্রথম ধাপ, তেমনি বাসর হলো দ্বিতীয় ধাপ। একটি ইসলামিক বিয়ের সম্পূর্ণভাবে সঠিকভাবে করানোর জন্য যেমন দোয়া রয়েছে তেমনি  বাসর রাতের দোয়া সমূহ রয়েছে তা বিষয়ে আমাদের জানা খুব দরকার। আমরা অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে থাকি ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে এবং বাসর রাতের দোয়া সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক বাসর রাতের দোয়া সমূহ সম্পর্কে। 

বিয়ের পর নব দম্পতির প্রথম মধুরময় সম্পর্কে বাসর বলা হয়। এই সময়টিতে দুইজন নতুন মানুষ বৈধভাবে একে অপরের কাছাকাছি আসে। এই সময়ের উভয়ের জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। এই সময় নব দম্পতির করণীয় সম্পর্কে অনেকে অনেক মন্তব্য করে থাকেন। নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিয়ের পর নব দম্পত্তির প্রথম করণীয় হচ্ছে প্রথম সাক্ষাতে দুই রাকাত নফল নামাজ এক সঙ্গে আদায় করবে। নামাজের জন্য স্বামী আগে দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। নামাজের সময়টি যদি রাতের বেলা হয় তবে কেরাত একটু উচ্চস্বরে পড়বে আর যদি দিনের বেলা হয় তবে নিম্নস্বরে পড়বে।

নামাজের পর দোয়া পড়া। নামাজের পর পরিবারের বরকত কল্যাণে উভয়ে এ দোয়া করবে, কিংবা স্বামী দোয়া করবেন আর স্ত্রী আমিন আমিন বলবে। দোয়াটি হল-

اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিকলী ফি আহলি, ওয়া বারিক লাহুম ফিইয়া; আল্লাহুম্মাজমাঅ বাইনানা মা জামাতা বিখাইরিন ওয়া ওয়া ফাররিক বাইনানা ইজা ফররাকতা ইলা খাইরিন।

অর্থ: হে আল্লাহু! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিজিক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণের সঙ্গে একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথে বিচ্ছেদ ঘটান (তাবারানি)।

নববধূর কপালে হাত রেখে স্বামীর দোয়া বিয়ের পর উভয় একত্রে নামাজ আদায় করে দোয়া করবে এবং স্বামী তার স্ত্রীর কপালে হাত রেখে এ দোয়া করবে এভাবে দোয়া করা সুন্নত। দোয়াটি হলো-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা; ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শারিহা; ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকেও আপনার আশ্রয় চাই (আবু দাউদ)।

তারপর সম্ভব হলে একে অপরকে মিষ্টি জাতীয়বাদ দুধ জাতীয় খাবার খাওয়াবে। পরস্পর পরস্পরের সাথে পরিচিত হবে এবং ভালোবাসা পূর্ব কথাবাত্রা বিনিময় করবে এতে তাদের ভেতরে ভয়-ভীতি সংকোচ হতাশ কিংবা বিষন্নতা দূর হবে। অনেকে প্রশ্ন করে থাকে বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে কি স্বামী স্ত্রী পরস্পর মিলিত হতে পারবে? হ্যাঁ, বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছা করলে তো অপরের সঙ্গে মিলিত হতে পারবে। এতে ইসলামের কোন বাধা নেই। কেননা বিয়ের মাধ্যমে তারা একজন আরেকজনের জন্য হালাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সহবাসের সময় একটি দোয়া পড়তে হয়। সুন্নত সহবাসের সময় তারা উভয় তাদের উভয়ের কল্যাণের জন্য এই দোয়াটি পড়বে। যাতে রয়েছে শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার আবেদন। তখন এ দোয়াটি পড়া সুন্নত, দোয়াটি হলো-

ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা।

অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদের উভয়কে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমাদের (এই মিলনে ) যদি কোন সন্তান দান করেন তাকেও শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন (বুখারী, মুসলিম)।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহ সব নব দম্পতিকে জীবনের প্রথম রাত কিংবা দিনের বাসর সময় উল্লেখিত নিয়ম গুলো যথাযথ মেনে চলার মাধ্যমে পরবর্তী জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে বরকত কল্যাণের দোয়া করার তৌফিক দান করুক আমিন।

ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম

বিবাহ সুন্নসম্মত পদ্ধতিতে হওয়ার বাঞ্চনীয়। বিবাহ সুন্নসম্মত নাহলে এর সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয় বর-কনে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই। ইসলামে বিবাহ মসজিদে ও জুম্মার দিন হওয়া উত্তম। এতে ঘোষণা ও জনসমাগম বেশি হয়। তবে অন্যদিনও অন্যস্থানে বিবাহ পড়ানো যায়।

বিবাহ সুন্নসম্মত পদ্ধতি হল-

প্রথমে কনের কাছ থেকে ইজন বা অনুমতি দিতে হবে।  বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর- কনে মুখ্য। তাই বিয়ের আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। সম্মতি না থাকলে কোন অবস্থায় ছেলে মেয়েকে বিয়েতে বাধ্য করা উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে। ( সূরা নিসা, আয়াত: ১৯ )। আবু সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আবু হুরাইয়া (রা.) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে নবী (সা.) বলেছেন- কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না।

বিবাহের যদি বর-কনে রাজি থাকে কাজী বিয়ে পড়ানোর সময় বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি একান্তভাবে আবশ্যক।কারণ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না। নবী (সা.) বলেছেন- অভিভাবক ছাড়া কোন বিবাহ নেই (তিরমিজি, হাদিস:১১০১)। 

যিনি বিয়ে পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশ্যে বলবেন যে অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন  'কবুল' বা 'আমি গ্রহণ করলাম'। বিবাহ পড়ানোর সময় কমপক্ষে দুজন সাক্ষী থাকতে হবে। তখন বর উচ্চস্বরে 'কবুল' অথবা 'আমি গ্রহণ করলাম' বা সম্মতিসূচক 'আলহামদুলিল্লাহ' বলবেন। এরূপ তিনবার বলা উত্তম (বুখারী, হাদিস:৯৫) স্মরণ রাখতে হবে যে আগে খুতবা পাঠ করতে হবে তারপর ইজবা-কবুল (প্রস্তাব দেওয়া নেওয়া )। শুধু বরকে কবুল বলতে হবে। কনের কাছ থেকে কোন অভিভাবক শুধু অনুমতি নিবেন। বর বোবা হলে সাথীদের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে। 

এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর উপস্থিত সবাই একত্রিতভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে।

দোয়াটি হল: বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফি খায়ের।

অর্থ: আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিক, তোমার ওপর বরকত দিক ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুক। (তিরমিজি, হাদিস:১০৯১)।

দ্রুত বিয়ের জন্য দোয়া

বিয়ে হলো আল্লাহ তাআলার একটি বিধান। কিন্তু সমাজের কিছু নিয়ম কানুনের চাপে পড়ে অনেক যুবক যুবতী সঠিক সময় বিয়ে করতে পারেন না। ফলে তারা মনেঃকষ্টে ভোগেন। দ্রুত বিয়ে সম্পর্কে কিছু ওলামায়ে কেরাম কিছু আলেমের কথা বলেছেন, এর মধ্যে বিশেষ কিছু আমল তুলে ধরা হলো। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক বিয়ের জন্য দোয়া সম্পর্কে।
যারা তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চান তারা নিচে উল্লেখিত ১০ টি আমল নিয়মিত করুন। রাব্বুল আলামিন আপনার জন্য একজন উত্তম জীবনসঙ্গী ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
  1. ইস্তেগফার করা: দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল হলো সব সময় ইস্তেগফার করা। অর্থাৎ যতটা বেশি সম্ভব আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া। যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে তার তো আল্লাহতালা কখনো ফেরত দেন না। পুরো দোয়াটি হল- 'আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাহি'। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন।
  2. সুরা ইয়াসিন পাঠ করা: সুরা ইয়াসিনের সীমাহীন মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যাদের অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু বিয়ে হয় না তারা সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে দ্রুত ফলাফল পাবেন। সুরা ইয়াসিনে ৭ টি মুবিন রয়েছে। আমল করার নিয়ম হলো প্রতিদিন সকালে সূর্য যখন পূর্ব আকাশে লাল হয়ে ওঠে তখন পশ্চিমমুখী হয়ে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা। আর যখনই 'মুবিন' শব্দ তেলাওয়াত করা হবে তখনই শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে পেছনের দিকে অর্থাৎ সূর্যের দিকে ইশারা করা।
  3. সূরা আদ-দোহা ও সূরা কাসাসের আয়াত পাঠ করা: অনেক আলেমরাই বিয়ে হওয়ার আমল হিসেবে সূরা আদ-দোহা ও সূরা কাসাসের কয়েকটি আয়াত পাঠ করতে বলেন। ওলামায়ে কেরামতদের মতে, যদি কোন ছেলে আয়াতটি ১০০ বার পাঠ করে তাহলে শীঘ্রই মহান রাব্বুল আলামিন তার জন্য ভালো পাত্রী ব্যবস্থা করে দেবেন। আর মেয়েরা যদি নিয়মিত সূরা আদ-দোহা ১১ বার পাঠ করে তাহলে তাদের জন্য আল্লাহতালা সৎপাতের ব্যবস্থা করে দেন। আয়াতটি হল- 'ফাসাক্কা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাকালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্কির'। বলা হয় হযরত মূসা (আ) যখন যুবক একাকী ও বিষণ্যতা অনুভব করতেন তখন তিনি এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন।
  4. সূরা তাওবার ১২৯ এক নম্বর আয়াতটি পাঠ করা: বিয়ে হওয়ার আমল হিসেবে সূরা তাওবার ১২৯ নম্বর আয়াতটি পাঠ করলে কাজে দেয়। যাদের বিয়ে হতে দেরি হচ্ছে তারা প্রতিদিন নামাজ আদায় করার পর নিয়মিত এই আমলটি করতে পারেন। আমলটি পাঠ করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে-প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে ১৯ বার বিসমিল্লাহ, ১১০০ বার সূরা তাওবার ১২৯ নং আয়াত, ১০০ বার দুরুদ শরীফ ও শেষে আবার ১৯ বার বিসমিল্লাহ পড়া। আয়াতটি হচ্ছে- 'ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশীল আজিম'। 
  5. সূরা মরিয়ম পড়া: দ্রুত বিয়ে হওয়ার আরেকটি দোয়া হচ্ছে প্রতিদিন যে কোন ওয়াক্তের নামাজ আদায় করার পর সূরা মরিয়ম তেলাওয়াত করা। যারা বিয়ে করবে অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ে এই আমলটি করতে পারেন। 
  6. তাসবিহের ফাতেমি পড়া: তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য নিয়মিত নামাজের পর তাসবিহে ফাতেমি পাঠ করা উত্তম। তাসবিহে ফাতেমি পড়ার আগে কুরআন তেলাওয়াত ও দরুদ পাঠ করা ভালো। তাসবিহে ফাতেমা হল- '৩৩ বার সুবহানাল্লাহ,৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা'। দিনের যেকোনো সময় দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেও তাজবিহে ফাতেমি পড়া যায় টানা ৪১ দিন বাদ না দিয়ে এ আমলটি করতে হবে। নিয়মিত এটি পাঠ করলে তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়া বিয়ের প্রস্তাব পাওয়া এবং বিয়ের সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা অতি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
  7. সূরা মুজাম্মিল পড়া: কোন মেয়ে যদি বিয়ের বয়স হওয়ার শর্তেও বিয়ে না হওয়া কিংবা বিয়ের জন্য ভালো প্রস্তাব না পাই তাহলে তার অভিভাবকদের যে কোন একজন শুক্রবার জুমাআর নামাজের পর ২ রাকাত নামাজ আদায় করে ২১ বার সূরা মুজাম্মিল তেলাওয়াত করতে পারেন। আল্লাহ চাইলে খুব শীঘ্রই বিয়ের প্রস্তাব পাওয়া শুরু হবে।
  8. ইয়া ফাত্তাহু পাঠ করা: বিবাহযোগ্য হওয়ার সত্ত্বেও যেসব যুবক-যুবতীদের বিয়ে হচ্ছে না, তাদের মধ্যে ছেলেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং বিবাহযোগ্য মেয়েরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার আগে ৪০ বার করে ৪০ দিন পর্যন্ত 'ইয়া ফাত্তাহু' পাঠ করবেন। ইয়া ফাত্তাহু মহান রাব্বুল আলামিনের একটি পবিত্র নাম। এই পবিত্র নামটি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর দুই হাত বুকের উপর রেখে ৭১ বার পাঠ করলে অভাব দূর হয়।
  9. সূরা আল-ফুরকান পাঠ করা: বিয়ের জন্য সৎ ও যোগ্য পাত্র-পাত্রীর জন্য দোয়া করতে হবে। যাদের সময় মত বিয়ে হচ্ছে না তারা প্রত্যেকে নামাজের শেষ বৈঠকের দোয়া মাসুরা পড়ার পর সূরা আল-ফুরকানের এই আয়াতটি পাঠ করে সালাম ফিরবেন। আয়াতটি হলো- 'রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুরুরি-ইয়াতিনা কুররাতা আয়ুনিও-ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা'। বিয়ের অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত আমলটি করলে আল্লাহ ভক্ত, দ্বীনদার, ও আদর্শ পাত্র-পাত্রী পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ।
  10. বিশেষ কিছু বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া: ধৈর্য সহকারে নিয়মিত সূরা নূরসূরা মুমিনুনসূরা ওয়াকিয়াহোসূরা লোকমানসুরা মুলকসূরা শুআরা, এবং সূরা আল বাকারা পড়তে থাকুন। তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন।

বিয়ে পড়ানোর কথা

বিয়ের জন্য শুধু কবুল বলাই যথেষ্ট। তারপরও বর বা কনে কে জানানোর জন্য যে, কোন গ্রামে কার সাথে বিবাহ হচ্ছে। সেটা এমনভাবে-অমুক নিবাসী, অমুকের কততম ছেলে অমুক এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে (বাকি/নগদ) তোমার সহিত বিবাহ হচ্ছে তুমি কবুল? কবুল থাকলে বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল। ছেলের বেলায় মেয়ের বাপের নাম, মেয়ের নাম----ওই একই ভাবে বলা হয়। 

বিয়ের দোয়া বাংলা

বিয়ে হলে কি সামাজিক বন্ধন। এই সামাজিক বন্ধন নিয়ম ভাবে করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য কিছু দোয়া ফরজ করেছেন। তার ভেতরে এটি একটি ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া বা বিয়ের দোয়া। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক বিয়ের দেওয়া সম্পর্কে।
সকল কাজেরই একটি নিয়ম রয়েছে, আর এই নিয়ম নীতি মেনে আমাদের সকল কাজ করতে হবে, তেমনি বিয়ের ও একটি দোয়া আছে, দোয়াটি হল-

بارَكَ اللّهُ لَك، وَبارَكَ عَلَـيْك، وَجَمَعَ بَيْـنَكُما في خَـيْر

উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খাইরিন।

অর্থআল্লাহ আপনাকে আশীর্বাদ করুক, এবং আপনার ওপর তার বরকত বর্ষণ করুক, এবং আপনাকে কল্যাণের সাথে যুক্ত করুক। (আবু দাউদ) ।

উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের দোয়া

পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহর নবী মূসা (আ)-এর কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। সেখানে মূসা (আ)-এর একটি দোয়াও এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তার বিয়ে ও থাকা খাওয়া ব্যবস্থা করেছেন। আশ্রয়ের পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গীরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দোয়াটি হল- 

ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ

উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা-আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফারিক।

অর্থহে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৪)।

উপসংহার

বিয়ে একটি মানবিক প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তায়ালার বিধানও বটে। মূলত দৃষ্টিগত ভাবে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। মানুষের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব দূর হয়। জীবনের সুখ প্রশান্তি ও আনন্দের ফলগুধারা বয়ে যায় বিয়ের মাধ্যমে।

বাস্তব জীবনে বিয়ের গুরুত্ব কি বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টি করার পর হযরত হাওয়া (আ)-কে তার জীবন সঙ্গিনী রূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।

আশা করি আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পারবেন ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে। এরকম সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url