কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক,আপনারা জানেন যে প্রাচীনকাল থেকেই কাঁচা একটি জনপ্রিয় ভেষজ উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। শুধু সুস্বাদু রান্নার জন্যই নয় এবং বিভিন্ন রোগব্যাধি এর চিকিৎসার জন্য কাঁচা হলুদের ব্যবহার অতি প্রাচীন। তাই আজকে আমরা কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
বাংলার রান্নাঘরে কাঁচা হলুদ অতি পরিচিত একটি উপাদান। ছোটবেলা থেকেই আমাদের প্রায় সবারই মনে এই ধারণা রয়েছে যে, হলুদ শুধু মসলা হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। বিশেষত, কাঁচা হলুদ যেকোনো প্রাকৃতিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী উপাদান। তবে, এই উপকারী কাঁচা হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন, কারণ অতিরিক্ত কাঁচা হলুদের ব্যবহা্র আপনার জন্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।
চলুন তাহলে আর দেরি না করে আমরা কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ
কাঁচা হলুদে রয়েছে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান কুরকুমিন, যা হলুদের মূল কার্যকরী উপাদান হিসেবে পরিচিত। কুরকুমিনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী বিভিন্ন ধরনের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
চলুন দেখা যাক কাঁচা হলুদের মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে
প্রোটিন
ফাইবার
ভিটামিন সি
ভিটামিন ই
ভিটামিন কে
পটাশিয়াম
ক্যালসিয়াম
আয়রন এবং
ম্যাগনেসিয়াম
এই উপাদানগুলো কাঁচা হলুদকে একটি পূর্ণাঙ্গ পুষ্টি সম্পন্ন উপাদান হিসেবে গড়ে তুলেছে, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
কাঁচা হলুদের রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা যা শরীরের প্রায় সব অঙ্গের সুস্থতায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নিই কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে:
প্রদাহনাশক হিসেবে কার্যকরী
কাঁচা হলুদে কুরকুমিন থাকার কারণে এটি প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত যারা আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টের ব্যথা এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য কাঁচা হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ শরীরের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, বিশেষত ঠান্ডা, সর্দি-কাশি ও ভাইরাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী।
হজমে সহায়ক
কাঁচা হলুদ হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এটি পাচনতন্ত্রের এনজাইমগুলোর কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করে, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যায় খুবই কার্যকর।
ত্বকের যত্নে উপকারী
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় কাঁচা হলুদ একটি কার্যকরী সমাধান। এটি ত্বকের ব্রণ, দাগ, র্যাশ এবং অন্যান্য সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। হলুদে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের জীবাণু দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। বিশেষ করে কাঁচা হলুদের রস ও চন্দন মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাঁচা হলুদের কুরকুমিন উপাদান ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক। এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামিয়ে দেয় এবং টিউমার গঠনের ঝুঁকি কমায়। বিশেষত স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
কাঁচা হলুদ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক এবং ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তবে নিয়মিত কাঁচা হলুদ গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ ব্যবহার শর্করার মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কাঁচা হলুদ রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় সহায়ক। কুরকুমিন রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তের প্রবাহ সচল রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি নিউরন সেলগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে এবং আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হলুদ দুধ খাওয়ার উপকারিতা
হলুদ দুধ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাকৃতিক পানীয়। হলুদ ও দুধের মিশ্রণ শক্তিশালী পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষত শীতকালে বা ঠান্ডাজনিত সমস্যায় এটি একটি প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করে। নিচে হলুদ দুধ খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
হলুদে রয়েছে কুরকুমিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত হলুদ দুধ খেলে শরীরের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে, বিশেষত সর্দি-কাশি এবং ফ্লুর ক্ষেত্রে এটি কার্যকর।
প্রদাহ ও ব্যথা কমায়
হলুদ দুধের একটি প্রধান উপকারিতা হল এটি প্রদাহ কমাতে সহায়ক। কুরকুমিন প্রদাহনাশক উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যথা এবং ফোলা কমাতে দারুণ কার্যকর।
হাড়ের মজবুতির জন্য উপকারী
দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা হাড়ের মজবুতির জন্য প্রয়োজনীয়। হলুদ দুধ খেলে হাড় মজবুত হয় এবং অস্টিওপরোসিসের মতো হাড়ের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয়। এটি বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
হজমে সহায়তা করে
হলুদ দুধ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। এটি পাকস্থলীতে অম্লীয়তার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং গ্যাস্ট্রিক, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করে।
ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে
হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত হলুদ দুধ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং ব্রণ, দাগ বা র্যাশ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে, যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
মানসিক চাপ ও ঘুমের উন্নতি করে
হলুদ দুধের দুধে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সহায়ক এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হলুদ দুধ খেলে ঘুমের মান ভালো হয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
হলুদ দুধ রক্তের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কুরকুমিন রক্ত প্রবাহের গতি স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
হলুদ দুধ মেটাবলিজম বাড়ায় এবং শরীরে চর্বি জমতে দেয় না। এটি অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথায় উপকারী
হলুদ দুধ সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথা কমাতে কার্যকর। এটি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে, যা গলার জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত আরাম দেয়।
রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার
রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্রণ ও দাগ দূর করা এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। আজকাল কাঁচা হলুদের ব্যবহার শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যচর্চায় নয়, বরং ত্বকের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলুন দেখে নিই রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের কিছু কার্যকরী ব্যবহার।
ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ অনেক কার্যকর
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে
কালো দাগ ও পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে
সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়
চোখের নিচের কালি দূর করতে কার্যকর ভুমিকা রাখে
তবে আপনাকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে, যেমন:
খুব বেশি পরিমাণে হলুদ ত্বকে ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি ত্বকে হলদে দাগ ফেলতে পারে।
ত্বকের সংবেদনশীলতায় কাঁচা হলুদ প্রয়োগের আগে হাতের ত্বকে পরীক্ষা করে নিন।
কাঁচা হলুদের অপকারিতা-কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়
আপনার জেনে রাখা উচিত যে কাঁচা হলুদ অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ উপাদান, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। নিচে কাঁচা হলুদের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হলো।
গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের সমস্যা
কাঁচা হলুদের অতিরিক্ত সেবন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। কুরকুমিনের উপস্থিতি পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন করতে পারে, যা বদহজম ও পেট ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই কাঁচা হলুদ সেবনের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে।
রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়
কাঁচা হলুদের কুরকুমিন রক্ত পাতলা করার একটি প্রাকৃতিক গুণ রয়েছে। এটি রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে যাদের রক্ত পাতলা করার ওষুধ চলছে তাদের কাঁচা হলুদ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব
কাঁচা হলুদের অতিরিক্ত ব্যবহার পেটের সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ সেবনে ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তাই হলুদের পরিমাণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় সতর্কতা
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ ব্যবহারে কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবের কারণে গর্ভাবস্থার কিছু জটিলতায় এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কাঁচা হলুদ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিডনি পাথরের ঝুঁকি
কাঁচা হলুদে অক্সালেট নামক উপাদান রয়েছে যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য কাঁচা হলুদ বেশি পরিমাণে গ্রহণ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
কাঁচা হলুদ ব্যবহারের কিছু টিপস
কাঁচা হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।
সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করুন: প্রতিদিন মাত্রাতিরিক্ত কাঁচা হলুদ গ্রহণ না করে নিয়মিত পরিমাণে ব্যবহার করুন। এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রস অথবা গুঁড়া খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
প্রাকৃতিকভাবে ব্যবহার করুন: সম্ভব হলে রাসায়নিক মুক্ত, প্রাকৃতিক কাঁচা হলুদ ব্যবহার করুন।
হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খান: সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে কাঁচা হলুদ খেলে হজম ভালো হয়।
ত্বকে ব্যবহারের আগে পরীক্ষা করুন: ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের আগে হাতের ছোট্ট একটি অংশে লাগিয়ে দেখে নিন। এলার্জি বা প্রতিক্রিয়া না হলে ব্যবহার করতে পারেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হয়?
কাঁচা হলুদ খাওয়া সরাসরি ত্বক ফর্সা করে না, তবে এটি ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলো ত্বকের ভেতর থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে ত্বক আরও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মসৃণ হয়ে ওঠে। তবে এটি চটজলদি ত্বকের রং পরিবর্তন করে না; বরং নিয়মিত খেলে ত্বকের দাগ কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বলতা আনতে পারে।
সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে কি উপকার হয়?
সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি হজমের জন্য ভালো এবং পাকস্থলীর প্রদাহ কমায়। সকালে কাঁচা হলুদ খেলে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। যাদের সকালে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়, তারা সকালে হালকা গরম পানির সাথে কাঁচা হলুদ খেলে উপকার পেতে পারেন।
হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়?
যদিও হলুদ অত্যন্ত উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অনেক বেশি কাঁচা হলুদ খেলে পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে বদহজম ও পেটের অস্বস্তি হতে পারে। হলুদ রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, তাই যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের সতর্ক থাকা উচিত। এছাড়া, অতিরিক্ত হলুদ খাওয়ার ফলে মাথা ঘোরা, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে।
হলুদ চা কখন খেতে হয়?
হলুদ চা সাধারণত সকালে খালি পেটে অথবা রাতে শোয়ার আগে খাওয়া ভালো। সকালে খেলে এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরকে সারাদিন কর্মক্ষম রাখে। আর রাতে শোয়ার আগে খেলে এটি শরীরের পেশি ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। যারা রাতে হালকা পানীয় খেয়ে ঘুমাতে চান, তাদের জন্য হলুদ চা বেশ উপকারী।
প্রতিদিন কতটুকু হলুদ খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন প্রায় এক চা চামচ হলুদ (প্রায় ৪-৬ গ্রাম) খাওয়া স্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। এটি শরীরের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। খাবারের সাথে গুঁড়া হলুদ ব্যবহার করতে পারেন বা পানির সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, মাথা ঘোরা, বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
উপসংহার
কাঁচা হলুদ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রাকৃতিক আশীর্বাদ। তবে এটি সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। হলুদ দুধ নিয়মিত সেবন করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।
হলুদ চা সাধারণত সকালে খালি পেটে অথবা রাতে শোয়ার আগে খেলে মেটাবলিজম বাড়ে ও শরিরের বাথা কমাতে সাহায্য করে।কাচা হলুদ এর উপকারিতাগুলো যেমন আমাদের জীবনযাত্রাকে সুস্থ রাখতে সহায়ক, তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়। তাই কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার আগে এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আশা করি লিখাটি পড়ে কাচা হলুদ এর গুনাগুন ও এর খারাপ দিকগুলি সম্পকে জানতে পেরেছেন। এরকম স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের সাইট ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url