কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন -কিডনি নষ্ট হওয়ার লক্ষণ

 প্রিয় পাঠক,কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? এই বিষয়টি বুঝার কিছু লক্ষণ রয়েছে। কিডনি যদি নষ্ট হয়ে পড়ে তাহলে অনেক সময় কিডনিতে পানি জমে যায় কিন্তু কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? অনেকেই এই সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেনা। যার ফলে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। আজকের এই আর্টিকেলে কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

আপনি যদি আপনার কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? এ বিষয়গুলো বুঝতে চান তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন দেরি না করে কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? তা জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন

কিডনিতে পানি জমার কারণ

কিডনি আমাদের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যদি কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায় অথবা কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেই তাহলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় কিডনিতে পানি জমে যায় কিন্তু কিডনিতে পানি জমার কারণ সম্পর্কে আমরা অবগত না থাকার কারণে এটি সহজ ভাবে বুঝতে পারিনা। তাই আমাদেরকে প্রথমে কিডনিতে পানি জমার কারণ সম্পর্কে জানতে হবে।

শরীরে যদি তরল মাত্রার ভারসাম্যহীনতা ঘটে তাহলে এই কারণে অনেক সময় কিডনিতে পানি জমে। শরীরে এই ভারসাম্যহীনতা ডিহাইড্রেশন, কিডনি রোগ কিডনিতে পাথর এবং বেশ কিছু ওষুধ সহ বেশ কয়েকটি কারণে হতে পারে। শরীর যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পায় না তখন ডিহাইড্রেশন ঘটে।

এ ছাড়া কিডনির মাধ্যমে ফিল্টার করা তরলের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে কিডনিতে পানি জমে যেতে পারে। সাধারণত কিডনি রোগ এবং কিডনিতে পাথর উভয়ই শরীরের তরল ফিল্টার করার ক্ষমতা কে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যার ফলে কিডনিতে পানি জমে যায়।

বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো সেবন করলে শরীরের তরল ফিল্টার করার ক্ষমতাকে হস্তক্ষেপ করতে পারে যার ফলে কিডনিতে পানি জমে যেতে পারে। সাধারণত কিডনি যদি তার কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে বেশিরভাগ সময় কিডনিতে পানি জমে যেতে পারে। গুরুতর জটিলতা এবং অবস্থা পরিচালনা করার জন্য কিডনিতে পানি জমে যাওয়া মূল কারণ।

কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন - কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনিতে পানি জমেছে

আপনার যদি কখনো কিডনিতে সমস্যা হয় অথবা মনে হয় আপনার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে তাহলে কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? সে সম্পর্কে আগে আপনাকে জানতে হবে। কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনিতে পানি জমেছে? এর লক্ষণগুলো না জানেন তাহলে কিডনি রোগ সহজ ভাবে নির্ণয় করতে পারবেন না। তাই আপনার কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? তা জেনে নিন।

  • প্রসাবের পরিবর্তন
  • প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • প্রসাবের সময় ব্যথা
  • শরীর ফুলে যাওয়া
  • সব সময় ঠান্ডা লাগা
  • মনোযোগ দিতে না পারা
  • বমি বমি ভাব
  • ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া
  • ত্বকে র‍্যাশ হওয়া

১। প্রসাবের পরিবর্তনঃ কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ হল প্রসাবে পরিবর্তন। এমনি সময় যদিও আমাদের স্বাভাবিক প্রসাব হয় কিন্তু যদি কিডনির সমস্যা দেখা যায় তাহলে আমাদের প্রসাব হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় অথবা কমে যায়। বিশেষত রাতে এই সমস্যা বেশি বৃদ্ধি পায়। প্রসাবের রং গাঢ় হয়।

২। প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়াঃ কিডনি সমস্যা অথবা কিডনিতে পানি জমেছে এটির বোঝার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল প্রসাবের সাথে রক্ত বের হওয়া। যদি এরকম হয় তাহলে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি লক্ষণ। তাই দেরি না করে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৩। প্রসাবের সময় ব্যথাঃ প্রসাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরো একটি অন্যতম লক্ষণ। মূলত প্রসাবের সময় ব্যথা জ্বালাপোড়া করা কিডনিতে পানি জমার অন্যতম একটি লক্ষণ।

৪। শরীর ফুলে যাওয়াঃ কিডনিতে পানি জমে যাওয়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান লক্ষণ হল শরীর ফুলে যাওয়া। কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং বাড়তি পানি বের করে দেয়। কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা হলে এ পানিগুলো বের হতে পারে না যার ফলে শরীর অনেকটা ফুলে যায়।

৫। সব সময় ঠান্ডা লাগাঃ কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা হলে অথবা পানি জমলে প্রচন্ড গরম আবহাওয়াতেও শীত অনুভূত হয়। এ ছাড়া কিডনিতে কোন ধরনের সমস্যা হলে নিয়মিত জ্বর আসতে পারে।

৬। মনোযোগ দিতে না পারাঃ সাধারণত শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। যার ফলে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়। সাধারণত কিডনিতে পানি জমার অন্যতম একটি লক্ষণ হলো এটি।

৭। বমি বমি ভাবঃ শরীরের রক্তে বর্জনীয় পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় এবং কিডনিতে পানি জমে যাওয়ার কারণে অনেক সময় বমি বমি ভাব এবং মাঝেমধ্যে বমি পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত এটি কিডনিতে পানি জমে যাওয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ।

৮। ছোট ছোট শ্বাস নেওয়াঃ কিডনিতে কোন সমস্যা হলে ফুসফুসের তরল পদার্থ জমা হয়। এছাড়া কিডনি রোগে শরীরের রক্তশূন্যতা ও দেখা দিতে পারে। যার ফলে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে এবং ছোট ছোট করে শ্বাস নেওয়া হয়। সাধারণত এটি কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ।

৯। ত্বকে র‍্যাশ হওয়াঃ যদি কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায় তাহলে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যায়। এ ছাড়া কিডনিতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমে যায় যার ফলে ত্বকের চুলকানি সহ ত্বকে র‍্যাশ সৃষ্টি হতে পারে। কিডনি রোগের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। আশা করি কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনিতে পানি জমেছে? এ বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন।

কি কি লক্ষণে বুঝবেন কিডনিতে পানি জমেছে

প্রতিটি রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যে লক্ষণগুলো দেখে আমাদের বুঝতে হবে আমরা এই রোগে আক্রান্ত। কি কি লক্ষণে বুঝবেন কিডনিতে পানি জমেছে? আপনাকে অবশ্যই কিডনির সমস্যা নির্ণয় করার জন্য এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।

কি কি লক্ষণে বুঝবেন কিডনিতে পানি জমেছে তা উল্লেখ করা হলোঃ

১। কিডনিতে পানি জমে ব্যথা ক্লান্তি উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ার মত সমস্যাগুলো দেখা যায়। এছাড়া কিডনি রোগের আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে। যা আমরা ইতিমধ্যেই ওপরের আলোচনায় আপনাদের জানিয়েছি।

২। বমি বমি ভাব। কিডনি সমস্যা হলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হয় এবং মাঝেমধ্যে বমি হওয়ার মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। সাধারণত কিডনিতে সমস্যা হওয়ার অন্যান্য লক্ষণ গুলোর সাথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

৩। মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি কিডনি রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। কিডনিতে পানি জমলে অথবা অন্য কোন সমস্যা হলে মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।

৪। কিডনিতে পানি জমে যাওয়ার আরো একটি অন্যতম লক্ষণ হল প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। সাধারণত এই লক্ষণগুলো যদি প্রকাশ পায় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

কিডনিতে পানি জমলে করণীয়

উপরের আলোচনায় কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? এ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর লক্ষণ গুলো জানার পরে আমাদেরকে এখন কিডনিতে পানি জমলে করণীয় সম্পর্কে জানতে হবে। বেশ কিছু খাবার রয়েছে এবং কিডনিতে পানি জমলে করণীয় রয়েছে অবশ্যই আমাদের এই কারণে এগুলো অনুসরণ করতে হবে।

১। আপনার যদি কিডনির সমস্যা থাকে তবে স্বাস্থ্যকর দায়ের অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কিডনিতে পানি জমলে আমাদেরকে প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন লবণ এবং চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।

২। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কিডনিতে পানি জমলে অবশ্যই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করতে হবে। যদি এই সমস্যা ডিহাইড্রেশন এর কারণে হয় তাহলে অবশ্যই পানি বেশি করে পান করতে হবে।

৩। যদি এই কারণটি কোন নির্দিষ্ট ওষুধের কারণে হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার মূত্র বর্ধক ও দিতে পারে যা শরীরকে অতিরিক্ত তরল নির্গত করতে সাহায্য করে।

৪। সাধারণত কিডনিতে পানি জমে গেলে এটি রোধ করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। এছাড়া নিয়মিত শরীর চর্চা করা। ভীষণ চা এবং ফল এছাড়া সবজির রস অতিরিক্ত তরল বের করে দিতে সাহায্য করে এগুলো খাওয়া।

৫। উচ্চ ফাইবার এবং কম সোডিয়ামযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কিডনিতে পানি জমে থাকা কমাতে সাহায্য করে। কিছু সম্পূরক যেমন ড্যান্ডেলিয়ন রুট অতিরিক্ত তরল নির্গমন কে প্রচার করে কিডনিতে পানি জমে থাকা কমাতে সাহায্য করে।

কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেনঃ শেষ কথা

কিডনিতে পানি জমার কারণ, কিডনিতে পানি জমেছে কিভাবে বুঝবেন? কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনিতে পানি জমেছে? কি কি লক্ষণে বুঝবেন কিডনিতে পানি জমেছে? কিডনিতে পানি জমলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url