সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত ও তাৎপর্য
প্রিয় পাঠক, সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত অনেক যা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না। ইসলাম ধর্মে প্রতিটি কথার মধ্যে এবং কাজের মধ্যে আল্লাহতালার ইবাদত এবং প্রশংসা জড়িত রয়েছে। আমরা যেমন সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে জানি না ঠিক এইরকম আরো অনেক অসংখ্য শব্দ রয়েছে যাতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং মহত্ত্ব প্রকাশ করা হয়। এই আর্টিকেলে সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব।
আপনি যদি সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন দেরি না করে সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত
- সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ কি
- সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত
- সুবহানাল্লাহ তাৎপর্য ও ফজিলত
- সুবহানাল্লাহ কখন এবং কেন বলবেন
- শেষ কথা
সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ কি?
আমরা যখন আশ্চর্যজনক কিছু জিনিস দেখি তখন সাধারণত সুবহানাল্লাহ এ কথাটি বলে থাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন এই শব্দটির বাংলা অর্থ কি? আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ কি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা। যেহেতু এটি আমরা প্রতিনিয়ত বলতে থাকি তাই আমাদের সকলের সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত এর সাথে সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ হচ্ছে সকল পবিত্রতা আল্লাহর। সুবহানাল্লাহ আল্লাহ নিজেই তার জন্য পছন্দ করেছেন। এই শব্দটি আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক পছন্দের একটি শব্দ। কারণ এই শব্দের মধ্যে আল্লাহতালার পবিত্রতা প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ যখন এই শব্দটি বলে জিকির করে তখন আল্লাহ তা'আলা অনেক বেশি খুশি হন।
সুবহানাল্লাহ শব্দের বাংলা অর্থ পবিত্রতা প্রকাশ করা ছাড়াও আরো একটি সুন্দর অর্থ রয়েছে। মহান আল্লাহ শব্দের বাংলা অর্থ হলো লোকেরা আল্লাহ সম্পর্কে যে ভুল বক্তব্য দেই আল্লাহ তার ঊর্ধ্বে। এই শব্দের আরও একটি বাংলা অর্থ দাঁড়ায় এটি হলো আল্লাহ তাআলার যেকোনো অপূর্ণতা মুক্তি পাক। সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ থেকে বোঝা যায় এটির গুরুত্ব কত বেশি।
সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত
মুসলিম হিসেবে সুবহানাল্লাহ শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা যখন কোন আশ্চর্যজনক জিনিস দেখি আমাদের দুই চোখ দিয়ে তখন সাধারণত আল্লাহতালার পবিত্রতা বোঝানোর জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করি। সুবহানাল্লাহ এই শব্দের অর্থ হলো সকল পবিত্রতা আল্লাহর। কিন্তু আপনি কি সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে জানেন?
আপনি যদি সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত জানতে পারেন তাহলে এটি বলা খুবই সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য। কারণ এটি অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি শব্দ আপনি যত বেশি সুবহানাল্লাহ শব্দটি বলবেন আপনার ততো বেশি গুনাহ মাফ হবে। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাঃ বলেন, আমরা রাসুল সাঃ নিকট ছিলাম।
তিনি বললেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তি প্রত্যেক দিন ১০০০ নেকি অর্জন করতে সক্ষম কি? তন্মধ্যে একজন বললেন, আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কিভাবে ১০০০ হাজার নেকি অর্জন করবে? তখন রাসুল সাঃ বললেন, ১০০ বার "সুবহানাল্লাহ" বললে, তার জন্য ১০০০ হাজার নেকি লেখা হবে। অথবা তার ১০০০ পাপ মোচন করা হবে। {মুসলিম, মিশকাত}
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ একবার গাছ রোপন করছিলেন। তখন তার পাশ দিয়ে হযরত মুহাম্মদ সাঃ যাচ্ছিলেন তখন তিনি হযরত আবু হুরায়রা রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কিসের জন্য ছাড়া রোপন করছো? তখন আবু হুরায়রা রাঃ উত্তর দিলেন আমার জন্য রোপন করছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন আমি কি তোমাকে এর থেকে আরও ভালো চারা খোঁজ দেব?
তখন আবু হুরায়রা রাঃ উত্তর দিলেন জি রাসূলুল্লাহ সাঃ। এরপর রাসুল সাঃ বললেন, "সুবহানাল্লাহী ওয়াল হামদুলিল্লাহী ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার"। রাসুল সাঃ আরো বললেন তুমি যতবার এই দোয়া পড়বে ততটি কাজ তোমার জন্য জান্নাতের রোপন করা হবে। এখান থেকে আমরা জানতে পারি যে সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত কত বেশি।
সুবহানাল্লাহ তাৎপর্য ও ফজিলত
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন, এ বাক্যটির অর্থ হলো আল্লাহ পবিত্র অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যাবতীয় মন্দ ও সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। হজরত মাইমুন ইবনে মেহরান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সুবহানাল্লাহর প্রসঙ্গে বলেছেন, এতে আল্লাহ তাআলার তাযিম রয়েছে এবং তাঁর পবিত্রতার বর্ণনা রয়েছে।
একবার হজরত ওমর রাঃ হজরত আলী রাঃ নিকট প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর অর্থ জানি। কিন্তু সুবহানাল্লাহ’র তাৎপর্য কি? তখন হজরত আলী রাঃ জবাব দিয়েছিলেন, "আল্লাহ তাআলা এ বাক্যটি নিজের জন্য পছন্দ করেছেন। তিনি এ বাক্য দ্বারা সন্তুষ্ট হন। এ বাক্যটির জিকির আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে অত্যন্ত পছন্দনীয়।"
নবীজি সাঃ সাহাবাদের বলেন, তোমরা কি প্রতিদিন এক হাজার নেকি লাভ এবং এক হাজার গোনাহ মাফ হওয়ার আমল জানতে চাও? তখন এক সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কী আমল করলে এক হাজার গোনাহ মাফ এবং এক হাজার নেকি লাভ করা যাবে? তখন নবী সাঃ বলেন, "১০০ বার সুবহানাল্লাহ বললে এক হাজার নেকি লেখা হবে অথবা এক হাজার গোনাহ মোচন হবে।" {সহিহ মুসলিমঃ ২৬৯৮}
আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা বর্ণনা করেছেন ফেরেশতারা। যার বাস্তব শিক্ষা কুরআনে কারিমে তুলে ধরা হয়েছে। রাসুল সাঃ এর হাদিস দ্বারা ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং অনেক ছোট বাক্য "সুবহানাল্লাহ" জিকির অত্যন্ত জরুরি। তাই আমরা যখন সময় পাবো অথবা কোন কাজের মধ্যে যদি ব্যস্ত থাকি তারপরেও মনে মনে আল্লাহ তায়ালা জিকির সুবহানাল্লাহ বলতে থাকবো।
সুবহানাল্লাহ কখন এবং কেন বলবেন
আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে সুবহানাল্লাহ কখন এবং কেন বলবেন? যেহেতু সম্পূর্ণ আরটি গেলে সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত সম্পর্কে জানানো হয়েছে সেহেতু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই সুবহান আল্লাহ কখন এবং কেন বলতে হবে? এ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সুবহানাল্লাহ শব্দ দ্বারা আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা প্রকাশ করা হয়।
আপনি যখন আল্লাহতালার প্রশংসা শুনবেন তখন সুবহান আল্লাহ বলবেন। আপনি যদি কখনো আপনার চলার পথে সুন্দর কোন জিনিস যা আল্লাহ তাআলার তৈরি দেখেন তখন আল্লাহতালার পবিত্রতা প্রকাশ করে সুবহানাল্লাহ বলবেন। এছাড়া আপনি যদি অবাক হওয়ার মতো কোনো কিছু জানেন অথবা শুনেন তখন সুবহানাল্লাহ বলতে পারেন।
সুবহানাল্লাহ বলার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির প্রশংসা করলেন। তাই আপনি যে কোন সময় যেখানে ইচ্ছা সুবহানাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা বোঝাতে পারেন। এই শব্দটি বললে আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হয়ে যায় তাই আল্লাহকে খুশি করার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে এসব শব্দটি জিকির করা উচিত।
সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলতঃ শেষ কথা
সুবহানাল্লাহ এর বাংলা অর্থ কি? সুবহানাল্লাহ বলার ফজিলত, সুবহানাল্লাহ তাৎপর্য ও ফজিলত, সুবহানাল্লাহ কখন এবং কেন বলবেন? এ বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি সুবহানাল্লাহ না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।কোন কিছু জানাতে কমেন্ট করুন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url